শুধু যুবলীগ নয়, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলেও নাটকীয় পরিবর্তন হবে, চমক আসবে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এই খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান যারা নেতা আছেন তাদের ঠিকুচি গ্রহণ করেছেন। তারা কে কি করেন, তাদের আর্থিক দুর্নীতি বা অন্যান্য দুর্নীতির কি অবস্থা ইত্যাদির একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় তালিকায় আছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। আর তৃতীয় তালিকায় রয়েছেন যেসমস্ত আওয়ামী লীগের নেতা দলের কার্যক্রম থেকে দূরে সরে গেছেন, যাদের বিরুদ্ধে বিতর্ক বা অভিযোগ নেই কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা দলে কোণঠাসা।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী এই তিনটি তালিকার আলোকে আগামী কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, যুবলীগে যেমন বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছেন তেমনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনেও শেখ হাসিনা শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে বিতর্ক আছে তাদের সবাই আগামী কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়বেন। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে একঝাঁক নতুন মুখ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারুণ্যের জয়জয়কার হবে বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে এবার সবচেয়ে বড় চমক হতে পারে সাধারণ সম্পাদক। যদিও এতদিন ধরে ধারণা করা হচ্ছিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ওবায়দুল কাদেরই হয়তো আরেকবারের মত সাধারণ সম্পাদক হবে। কিন্তু এই বিষয়টি এখন আর নিশ্চিত নয় বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যারা যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আছে তাদের মধ্যে অন্তত দুই জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই যারা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিত তাদেরকে চিহ্নিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অর্ধেকের বেশি বিতর্কিত এবং তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ রয়েছে। আবার বিতর্ক নেই, অভিযোগও নেই কিন্ত দলের সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ নেই এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে সংসদ বিহীন নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চান না। তাই এরাও বাদ পড়তে পারেন।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় নেতার প্রতি যে সমস্ত অনুসন্ধান ও তদন্ত হয়েছে তাতে ৯০ ভাগ নেতাই এবার কমিটি থেকে বাদ পড়েত পারেন। এবং তাদের বদলে নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে। আওয়ামী লীগে সভাপতি সম্প্রতি দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক আলোচনায় বলেছেন যে, আওয়ামী লীগে বহু নিবেদিক প্রাণ ও ভালো লোক আছে তাদেরকে দলে জায়গা করে দিতে হবে। যা বদনাম করে বা যাদের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় তাদের দরকার নেই।
একটি সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢাকার বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণে নেতৃত্ব আসতে পারে। আসতে পারে ছাত্র লীগের অনেক মোধাবী যারা কোথাও জায়গা পাচ্ছেন না। সেরকম শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত ব্যক্তিদেরকেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢোকানো হতে পারে এবং এই কেন্দ্রীয় কমিটিটা হবে তারুণ্যে ভরপুর।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব বিবেচনায় কাজ করছেন। সম্মেলনের জন্য এখনো দু’মাস সময় হাতে রয়েছে। এই দুই মাসের মধ্যে যাদেরকে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনবেন বা আনতে চান তাদেরকে তিনি বঙ্গভবনে ডাকবেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের কথা-বার্তা বলবেন। এক ধরণের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আওয়ামী সভাপতি মুজিব বর্ষের আগে এমন একটি আওয়ামী লীগ উপহার দিতে চান যে আওয়ামী লীগের কাউকে নিয়ে কোনো বিতর্ক হবে না।