দাবানলের মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে বেশিরভাগ মানুষ এখন ঘরবন্দি। তবে বদ্ধ ঘরেও আছে করোনার বিপদ! চীনের নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, বদ্ধ ঘরে এই ভাইরাস অনেকক্ষণ টিকে থাকতে পারে, বাড়াতে পারে সংক্রমণের আশঙ্কা। সম্প্রতি গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার সাময়িকীতে।
চীনের উহানে হাসপাতালের শৌচাগারে দেখা গেছে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের জেনেটিক বস্তু বাতাসে ভেসে রয়েছে। তখন গবেষকদের মনে প্রশ্ন জাগে– বাতাসে ভাসমান যে কোনো ক্ষুদ্র কণার সঙ্গে এই ভাইরাস কী দূরে যেতে পারে?
হাঁচি-কাশি, কথা বলার সময় থুতু কণা বা ড্রপলেট ছিটকে বের হয়। বড় বলে বাতাসে ভেসে ড্রপলেট বেশি দূরে যেতে পারে না। তাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা প্রথম থেকেই চিকিৎসকরা বলে আসছেন। তবে ড্রপলেটের চেয়েও ছোট যে কণা বা এরোসল বাতাসে ভেসে থাকে, তা দিয়েও কি ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস?
এরোসল আকারে ১ মাইক্রন বা মাইক্রোমিটারের (১ মিটারের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ) চেয়ে ছোট বলে বাতাসে ভেসে দূর-দূরান্তে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, কোথাও বাতাসবাহিত সংক্রমণের তথ্য তারা পায়নি। কিন্তু লকডাউন ও অন্য সতর্কতা সত্ত্বেও সংক্রমণ হচ্ছে।
তাহলে সংক্রমণ কীভাবে ঘটছে- সেটি আরও ঠিকভাবে জানাটা জরুরি। এ জন্য উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কে লানের নেতৃত্বে এক দল গবেষক দুটি হাসপাতালে পরীক্ষা চালান। তাতে এই সন্দেহ আরও জোরদার হয় যে, রোগটা বাতাসবাহিত হতেও পারে। যদিও এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
লানের বিজ্ঞানী দলটির গবেষণায় পাওয়া যায়, হাসপাতাল দুটির ওয়ার্ড, আশপাশের সুপারমার্কেট বা আবাসনে যে এরোসল মিলেছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পাওয়া গেছে শৌচালয়ে ও ভিড় হয় এমন দুটি স্থানে এবং বদ্ধ ঘরে।
বিশেষ করে চিকিৎসাকর্মীরা যেখানে তাদের ব্যবহৃত সুরক্ষা সরঞ্জামগুলো খুলে রাখেন, সেখান থেকে বায়ুবাহিত এরোসল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। সেগুলো রোগ ছড়ায় বা ছড়িয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও ভিড়ে বা বদ্ধ ঘরে থাকা যে বিপজ্জনক, সেটি স্পষ্টভাবেই জানা গেছে ওই পরীক্ষায়।
এ জন্য বিশেষজ্ঞরা চলমান এই লকডাউনের সময়টায় ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা সচল রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।