মহেশখালী ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুর রহমানকে ঘুষ লেনদেনকালে হাতেনাতে আটক করেছে দুর্ণীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মহেশখালী ভূমি অফিসে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
আটককালে আবদুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ লেনদেনের দুই লাখ ১০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।
এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম।
দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন জানান, স্থানীয় জনৈক ভূমিহীন ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দুদকের কাছে অভিযোগ করেন, মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর মৌজায় নিজের ভূমিহীন বাবা ও মায়ের নামে ভূমিহীন হিসেবে পাওয়া বন্দোবস্তিপ্রাপ্ত জমির নামজারি প্রতিবেদনের জন্য মহেশখালী ভূমি অফিসে যান। আব্দুর রহমান তার কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
তিনি জানান, প্রতিবন্ধী এই যুবকের কোনো অনুরোধেই মন গলেনি আব্দুর রহমানের। ঘুষের টাকা না দিলে প্রতিবেদন দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
বিষয়টি ওই প্রতিবন্ধী যুবক লিখিতভাবে দুদককে অবহিত করলে কমিশন অভিযোগসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ফাঁদ মামলা পরিচালনা করে ঘুষ গ্রহণকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
দুদক উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দীনের মতে, ঘুষগ্রহণের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগ থেকেই দুদক টিমের সদস্যরা মহেশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের চারদিকে ওৎপেতে থাকেন। মহেশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আব্দুর রহমান যখন সোমবার বিকেল ৪টার দিকে নিজের দপ্তরে বসে ঘুষের ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করছিলেন, ঠিক তখনই দুদক টিমের সদস্যরা তাকে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেন।
ওই সময় তার ব্যবহার্য ব্যাগ, ড্রয়ার তল্লাশি করে আরো নগদ প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করে দুদক দল। তিনি এসব টাকারও কোনো বৈধ উৎস জানাতে পারেননি। এসব টাকাও আজকেরই ঘুষের টাকা বলেই সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে।
আটক ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছেন।
স্থানীয় অধিবাসীদের মতে, ধৃত ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুর রহমান সার্ভেয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালী ভূমি অফিসে কর্মরত রয়েছেন। সেখানে খতিয়ান সৃজন, নামজারি খতিয়ান সৃজন, ভূমি জরিপসহ বিভিন্ন কাজে গ্রাহকদের জিম্মি করে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছেন। কেউ তার দাবিকৃত মোটা টাকা ঘুষ না দিলে কাজতো হয়-ই না, উল্টো বিরোধীপক্ষ থেকে সুবিধা নিয়ে ভুক্তভোগীকে বেকায়দায় ফেলে দেন এই সার্ভেয়ার। বিশেষ করে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনে নানা অজুহাতে জমির মালিকদের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এনিয়ে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভও প্রদর্শন করেছেন ভুক্তভোগীরা। দীর্ঘদিন পর হলেও এই দুর্নীতিপরায়ণ আবদুর রহমানকে আটক করায় দুদককে সাধুবাদ জানিয়েছেন মহেশখালীর সাধারণ মানুষ।