অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। তাঁর বাবা এরশাদ খান ছিলেন অতিরিক্ত সচিব। সিনহার দুই বোন। ছোট বোন থাকে আমেরিকায়, আর বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস থাকেন ঢাকার উত্তরায়। মায়ের মতো, সিনহার বড় বোন শারমিনও খুন হওয়ার ২২ ঘণ্টার পর ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সিনহার পরিবারকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি।
সিনহা কীভাবে মারা গেলেন, সে ব্যাপারে শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মামলা করতে গেছি কক্সবাজারে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে যেটা জানিয়েছেন, সেদিন রাতে বিজিবির চেকপোস্ট নিজের পরিচয় দেন। সিনহার গাড়িকে তাঁরা ছেড়ে দেন। এরপর টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে সিনহা আসেন ৯টা ২৫ মিনিটে। সিনহার সফরসঙ্গী সিফাত হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। আমার ভাইয়ের কিন্তু লাইসেন্স করা গান ছিল। গান তো গাড়িতে ছিল। পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতকে আমার ভাই বলেন, ‘আমি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। আমার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে যেটা বলেছেন, ফারদার কোনো কথা পুলিশ বলেনি। ফারদার ওয়ার্ড নেই। গুলি করা হলো। পুলিশ যদি ক্রিমিনাল ভেবেও গুলি করে, তাহলে তো পায়ের নিচে করতে হবে। উপর্যুপরি আমার ভাইয়ের বুকে চারটা গুলি করা হলো। আমার ভাই লুটিয়ে পড়ল। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে আমি নিজে কথা বলেছি। তিনি সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক। তিনি সে সময় সিভিল ড্রেসে ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। উনি যখন ঘটনাস্থলে আসেন, তখন আমার ভাই সেখানে পড়ে ছিলেন। তার চোখটা তখনো খোলা। তখনো তাঁর জীবন আছে। সিনহা তখন শ্বাস নিচ্ছিল। বাঁচার জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু কাউকে কোনো সাহায্য করতে দেওয়া হয়নি। উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অস্ত্র তাক করে বলে দেওয়া হয়েছে, সিনহার পাশে যেন কেউ না যায়। তারপর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ এসে আমার ভাইকে লাথি মারল। পুলিশ নিশ্চিত করল, ব্লিড আউট করে সিনহা মরুক। তারপরও যখন আমার ভাইকে পিকআপে তোলা হলো, তখনো আমার ভাইয়ের জীবন ছিল। হাসপাতালে যেটা ৪৫ মিনিটে নেওয়া যায়, তাকে নেওয়া হলো ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর। এই তথ্য আমাদের জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী।’
সিনহার বোন শারমিন আরও বলেন, ‘সিনহা ছিলেন চৌকস একজন অফিসার। শুটিংয়ে সিনহা বেস্ট ছিলেন। চার সেকেন্ডের মধ্যে কিন্তু সে শুটিং শেষ করতে পারত। সেই লেভেলের তার দক্ষতা ছিল। সে (সিনহা) যদি আত্মরক্ষা করতে চাইত, তাহলে সে তা করতে পারত। কিন্তু তার কাছে তো গানই ছিল না। কারণ সে গান গাড়িতে রেখে আসছিল। সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। পুলিশও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। পুলিশকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল। সিনহা তো বলেছিল, আপনার আমার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। এটাই তো সে বলেছে। তাদের যদি এতই রাগ, তাহলে আমার ভাইকে থানায় নিয়ে যেতে পারত, পায়ে গুলি করতে পারত, কিন্তু কেন তারা আমার ভাইয়ের বুকে গুলি করল। কার নির্দেশে কেন গুলি করে মেরে ফেলল। আমরা জানি না। আমরা জাস্টিস চাচ্ছি। ওকে তো আর পাব না। হাজার চেষ্টা করেও পাব না। জাস্ট জাস্টিস।’অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। ছবি: সংগৃহীত