বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ৮০ বছরের এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে, লালমনিরহাটে ভাতিজিকে চাচার ধর্ষণ, কুষ্টিয়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণ মাদরাসা শিক্ষকের, চরফ্যাশনে আবাসিক হোটেলে নিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরের বিরুদ্ধে, লক্ষ্মীপুরে বিধবা নারীকে দলবেধে গণধর্ষণ, গাজীপুরের শ্রীপুরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণ, কোটালীপাড়ায় নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে রাতভর মা ও মেয়েকে ধর্ষণ এ রকম শত শত ধর্ষণ হচ্ছে।
কয়টি মানুষ জানছে কয়টি বা বিচার হচ্ছে। গ্রেফতার হলেও কয়দিন বাদে জামিনে বেরিয়ে আসেন। কারণ তাদের হাত লম্বা। এতটাই লম্বা যে অনেকেই থেকে যান লোকচক্ষুর আড়ালে। আমরা নীরব দর্শক। এদিকে উত্তাল রাজপথ। ঘরের মা বোন আজ রাজপথে নেমে এসেছে। তাদের কন্ঠে স্লোগান লজ্জায় বাঁচি না ছিঃ ছিঃ। সত্যিই আজ লজ্জা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ ধর্ষণের বিচার নেই! আর কতো? হে ধর্ষক এবার তোরা থাম। যেখানে ধর্ষণের বিচার চেয়ে রাজপথে মা বোনেরা তখনই জামিন পেলেন সুবর্ণচরের সেই ধর্ষক রুহুল আমিন। সত্যিই দুঃখজনক।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়৷ তনু হত্যাকাণ্ডের চার বছর পার হলেও দীর্ঘ এ সময়েও এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। আদৌ তনু হত্যার বিচার হবে কি? এ দেশে তনুরা বিচার পাবে কবে? আজ রাজপথে নারীদের ইজ্জত রক্ষার আর্দনাত। প্রতিবাদে উত্তাল দেশ। যে দেশে তনুরা বিচার পায় না সে দেশে সাম্প্রতিক সময়ের ধর্ষণের বিচার কিভাবে দাবি করি? দুই দিন পর হয়তো এটাও ভুলে যাবো। আবার নতুন খবর জন্ম দিবে সেটি নিয়েই আবার কথা হবে। ভুলে যাবো তনু, সাত বছরের শিশু, বৃদ্ধসহ সবাইকে। আব্বা বলে ডাকবার পরও এতটুকু মায়া হয়নি ওদের।
দেশে ধর্ষণের বর্বরতা দেখে তো শুধু যুবতী বউ আর বোনদের নিয়ে চিন্তা হচ্ছে না, দুধের বাচ্চা থেকে শুরু করে ৬০ বছরের মা আর ৯০ বছরের দাদী নানীদের নিয়েও বুকটা কাপতে থাকছে হর-হামেশা।
প্রতি ৬ ঘন্টায় নাকি বাংলাদেশে একজন ধর্ষণ এর শিকার হয়! আমার তো মনে হয় এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। গত ৯ মাসে শুধু কেইস ফাইল হওয়া ধর্ষণ ঘটনা ৮৯০, তার মানে প্রতি মাসে শুধু হিসাবের ধর্ষণ প্রায় ১০০ এর কাছাকাছি। প্রতি মাসের এ রকম শত শত ধর্ষণ হয় যার কোনো হিসেবই রাখে না রাষ্ট্র! এমন বর্বরতা তো এ জাতি দেখেছে পরাধীন বাংলাদেশে। সেই ৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী করেছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এই দৃশ্য দেখে হয়তো বুক চাপড়াতেন। আর কথা বাড়াতে পারছি না মাননীয়, ক্লান্ত।
লেখক: সাংবাদিক