ভাঙা টিন ও বাঁশের বেড়ার ঘর নমিতা রানীর। বৃষ্টি এলে ঘরের এক কোণে গুটিসুটি মেরে নির্ঘুম রাত কাটে তার। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে এই শীতে অবস্থা আরও করুণ। দিনমজুর স্বামীর সামান্য আয়েই কোনোমতে চলছে অসুস্থ প্রতিবন্ধী নমিতা রানীর সংসার।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের পুর্ব সিন্দুর্না গ্রামের খাস জমিতে বসবাস করেন দিনমজুর সাধন চন্দ্র (৩৫) ও শারীরিক প্রতিবন্ধী নমিতা রানী (৩০) দম্পতি। সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকার মতো একটি ঘর তৈরি করতে। নিজের জমি নেই, সামর্থ্যও নেই। মাস চারেক আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে টিনের জন্য আবেদনও করেন। কিন্তু তা অপেক্ষাতেই ঝুলে আছে।
এলাকার অনেকে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য পেলেও এগুলোর কিছুই জোটেনি নমিতা রানীর ভাগ্যে। নিত্য অভাব আর অসুস্থতা তার সঙ্গী। খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিন কাটছে তার।
নমিতা রানীর একটি হাত ও একটি পা অচল। প্রতিবন্ধী হলেও জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিডি কার্ড কিংবা মাথা গোঁজার মতো একটা সরকারি ঘর। দিনমুজুর স্বামীর আয়ে ভর করেই চলছে সংসার।
এদিকে অসুস্থ প্রতিবন্ধী নমিতা রানীর বুকের ভাল্বের সমস্যা রয়েছে। ছেলের হার্টের সমস্যা। লবণ আনতে পানতা ফুরানোর সংসারে তাদের চিকিৎসা জোটাও যেন স্বপ্নের মতো। ভূমিহীন এই পরিবারে থাকার একটি ঘর ৬ মাস আগে প্রচুর বৃষ্টি ও ঝড়ে ভেঙে পড়ে। ওই ভাঙা ঘরেই কোনোমতে দুই সন্তানকে নিয়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় দিন কাটছে তাদের।
সাধন চন্দ্র বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন ধরে এই খাস জমিতে বসবাস করছি। স্ত্রী ও ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার সবকিছু শেষ। থাকার ঘরটি ভেঙে পড়েছে, তোলার উপায় নেই। ইউএনও’র কাছে টিনের জন্য দরখাস্ত দিয়েছি। ইউএনও বলেছেন, টিন এলে পাবেন। কিন্তু আজ চার মাসেও টিন পাইনি। কেউ যদি আমাকে টিন দিয়ে সাহায্য করত তাহলে ভগবানের কাছে আশীর্বাদ করতাম।’
ওই গ্রামের প্রতিবেশী আবু সাঈদ জানান, সাধন চন্দ্র একজন দিনমজুর। তার স্ত্রী শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ। তাদের থাকার ঘরটি ভেঙ্গে পড়েছে। টাকা পয়সা না থাকায় ভাঙ্গা ঘরটিতে ছেলে মেয়ে দিন কাটছে তার। সরকারি সহায়তায় তাকে একটি ঘর দেওয়া হলে তাদের কষ্ট লাঘব হতো।
সিন্দুর্না ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরল আমিন বলেন, ‘ওই পরিবারটির বিষয়ে জানা নেই। তবে সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করলে বিষয়টি দেখা যাবে।’
এ বিষয়ে হাতীবান্ধার ইউএনও সামিউল আমিন জানান, খোঁজখবর নিয়ে তাকে সহযোগিতা করা হবে।