কাক ডাকা ভোরে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। হাতে সবার প্লাস্টিকের বোতল। কারও হাতে একটি, আবার কারও হাতে দুটি। কোনোটির ভিতরে তেল, আবার কোনোটির ভিতরে পানি। উদ্দেশ্য একটাই কবিরাজের দেওয়া ফুঁয়ে ভালো হবে সকল রোগ-ব্যাধি।
গতকাল শনিবার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে। কবিরাজের পানি আর তেল পড়া নিতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের ছুটে যাওয়া জেলায় রীতিমত চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ওই কবিরাজের নাম সবুজ মিয়া। তিনি পেশায় একজন কাঠুরিয়া। বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পায়লাবের গ্রামে। জনশ্রুতি রয়েছে, সপ্তাহে চারদিন বনের কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। বাকি তিনদিন কবিরাজি করেন।
সরেজমিয়ে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার সকালে বোতল নিয়ে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ অপেক্ষা করছেন কবিরাজের ফুঁয়ের জন্য। কিন্তু এত মানুষের পানি পড়া বা তেল পড়া কীভাবে দেবেন তিনি? কিন্তু তার জন্য রাখা হয়েছে সুব্যবস্থা। কবিরাজ মাইকে ফুঁ দিতেই সবাই নিজ নিজ পানি ও তেলের বোতল উঁচিয়ে ধরলেন। আর তাতেই হয়ে গেল সব সমাধান! কিন্তু এই পদ্ধতি মানুষের ব্যাধি সারাতে কতটুকু কাযয়করী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
স্থানীয়দের দাবি, কাঠুরিয়া কবিরাজের ঝাড়ফুঁক পানি খেলে এবং তেল মালিশ করলে সব রোগ থেকে মুক্তি মেলে। উপস্থিত হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভক্তকে পৃথকভাবে ঝাড়ফুঁক দেওয়া সম্ভব নয় বলে এই ব্যবস্থা করেছেন কবিরাজ।
নির্দেশনা মোতাবেক সবাই নিজ নিজ বোতলের মুখ খুলে উপরে ধরার পর মাইক্রোফোন নিয়ে ফুঁ দেন কবিরাজ। এতেই নাকি পানি ও তেল পড়া নিতে আসা লোকজনের মনোবাসনা পূর্ণ হবে!
পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু বলেন, ‘কিছু ভক্তের অনুরোধে এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজ উপস্থিত হয়েছেন। পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয় সে জন্য আমি এসেছি। তেল পড়া ও পানি পড়ায় আমি বিশ্বাস করি না।’
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেজন্য আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম।’
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঝাড়ফুঁক কোনো চিকিৎসা নয়, এটি অপচিকিৎসা। অতি উৎসাহীদের ভ্রান্ত প্রচারণায় উৎসাহী হয়ে গ্রামের সাধারণ নিরীহ লোকজন এ সমস্ত কবিরাজদের খপ্পড়ে পড়ে।’
যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জ জামিয়াতুল ইমদাদিয়া প্রধান মুফতি মাওলানা আবু তাহের বলেন, ‘ইসলামে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। এর বাইরে ঝাড়ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা প্রতারণা ও শিরকের সামিল। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে।’