রোহিঙ্গা সংকট নিরসন ও তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ফের একটি প্রস্তাব পাস করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শিরোনামের এই প্রস্তাবটি বিপুল ভোটে গত বৃহস্পতিবার পাস হয়। ইইউ ও ওআইসির পক্ষে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিনল্যান্ড। আশা করা হচ্ছে, গৃহীত প্রস্তাবটি আগামী ডিসেম্বরে সাধারণ পরিষদের প্ল্যানারি বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা হয়েছে, এর জবাবদিহিতা নিশ্চিতে নিরাপত্তা পরিষদকে অব্যাহতভাবে বলার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায়ের ওপর আলোকপাত এবং এই জনগোষ্ঠীর সুষ্ঠু এবং টেকসই প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া এতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থতার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে দেশটিকে স্পষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন এবং প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ তৈরিসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক দূতকে বাস্তব পরিস্থিতির বিষয়ে রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেপ্টেম্বরে সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যেসব প্রস্তাব দেন, তার বেশ কয়েকটি ইইউ এবং ওআইসির এই প্রস্তাবেও স্থান পেয়েছে। সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১৪০ দেশ; বিপক্ষে ভোট পড়ে নয়টি; আর পক্ষাবলম্বনবিহীন ভোট পড়ে ৩২টি দেশের।
প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর এ বিষয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সংস্থায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এর সমর্থনে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এটিকে আমরা শুধু একটি দেশভিত্তিক প্রস্তাব হিসেবেই দেখছি না, এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি দায়বদ্ধতার দলিল, যার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হতে পারে।