ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট। মূলত শীত মৌসুমে যখন সাগর কিছুটা শান্ত থাকে ঠিক সেই মুর্হুত্বে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠে।
আর তাদের মূল টার্গেট থাকে রোহিঙ্গারা। চক্রটি প্রথমে দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা যুবক ও তরুণীদের নানা ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বের করে এনে সুবিধাজনক জায়গায় জড়ো করে ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় পাচারের কাজটি শুরু করে।
এদিকে গত কয়েকদিনে টেকনাফের সেন্টমার্টিন ও উখিয়ার সোনারপাড়া থেকে মোট ১৩৩ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করেছে পুলিশ এবং কোস্টগার্ড সদস্যরা। এদের মধ্যে ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিনদ্বীপ থেকে ১২২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসমান ট্রলার থেকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড সদস্যরা।
এদের মধ্যে ১৫ জন শিশু, ৫৯ জন নারী ও ৪৮ জন পুরুষ রয়েছে।
তাছাড়া শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উখিয়ার সোনারপাড়ায় একটি কটেজে মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য রাখা অবস্থায় ১১ রোহিঙ্গাকে আটক করে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে গিয়ে ২০১৩-২০১৪ সালে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সাগরে ডুবে যায়। এদের মধ্যে অনেকে মারাও যায়। এখনো নিখোঁজ রয়েছে কয়েক হাজার লোক। প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে একপর্যায়ে মানব পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। তবে চলতি মাস থেকে ফের সক্রিয় হয়ে উঠে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট।
জানা যায়-শীতের সময় বঙ্গোপসাগর অনেকটাই শান্ত থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রলাওে কিংবা নৌকায় করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এমন আশংকা থেকে ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং সীমান্ত রক্ষীদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টে।
জানা গেছে, প্রথমদিকে টেকনাফ-মিয়ানমার আন্তঃসীমান্তে মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় থাকলেও পরে কক্সবাজার জেলা পেরিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও ঢাকার শহরতলি হয়ে দেশের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। এই নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব দেয় মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে এসে বসতিগড়া রোহিঙ্গারা।
পরে স্থানীয় প্রভাবশালীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ মানব পাচারে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি এই নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত লাভ করে। এই নেটওয়ার্কের সদস্যরা অপহরণের পর বিদেশে পাচার করে মুক্তিপণ আদায়, থাইল্যান্ডে দাস শ্রমিক হিসেবে বিক্রির কাজ করে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহপরীরদ্বীপের এক ইউপি সদস্য জানান-প্রথমে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা লোকজন জড়ো করে ছোট ছোট নৌকার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের গভীরে নিয়ে যায়। এরপর তাদের সমুদ্রের গভীরে নিয়ে বড় নৌকায় তুলে দেয়া হয় মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য।
কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম জানান-মানবপাচার ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। তিনি বলেন-আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা না থাকলে শত শত হাজার হাজার মানুষ পাচার হতো। কয়েক বছর ধরে সেই অবস্থা আর নাই। এখন চেষ্টা হলেই ধরা পড়ছে।