ঝুলে যাওয়া প্রত্যাবাসন জট খোলা, সব রোহিঙ্গা ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং রাখাইনে হত্যা ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘ঐক্য’ চেয়ে দেশে দেশে চিঠি পাঠাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
এ পর্যন্ত প্রায় ২১টি দেশে চিঠি গেছে। বাকিটা পর্যায়ক্রমে যাচ্ছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মন্ত্রীর চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানিয়েছে, দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেন। প্রায় প্রতিদিনই চিঠি যাচ্ছে। পূর্ব-পশ্চিম, কাছের দূরের গুরুত্বপূর্ণ সব দেশেই চিঠি পাঠাচ্ছেন তিনি। চিঠির বিষয়বস্তু অত্যন্ত সাদামাটা তবে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন কিছু নয় বরং রোহিঙ্গা সঙ্কটটি দুনিয়ার স্মরণে রাখার জন্যই মন্ত্রী মহোদয় চিঠি লিখছেন। কিছু চিঠি গেছে।
বাকীগুলো যাচ্ছে। ঢাকার যে পজিশন সেটাই চিঠিতে থাকছে। সেখানে মূলত ৩টি বিষয়। প্রথমত: দ্রুত এবং টেকসই প্রত্যাবাসন। এটাই যে রোহিঙ্গা সঙ্কটের একমাত্র সমাধান সেটা দুনিয়াকে বলা হচ্ছে। এ-ও বলা হচ্ছে- জনবহুল বাংলাদেশের পক্ষে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাড়তি এ বোঝা বহন অসম্ভব। আমরা মানবিক কারণে সীমান্ত এবং হৃদয় খুলে দিয়েছি সাময়িক সময়ের জন্য। বড় ধরণের মানবিক সঙ্কটের দায় থেকে বিশ্বকে রক্ষায় প্রতিবেশী হিসাবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। দুনিয়াকে কলঙ্ক থেকে বাঁচিয়েছি। কিন্তু এখন অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফিরতে হবে। আমরা চাই রাখাইনে তাদের ফেরতের অনুকূল পরিবেশ দ্রুত ফিরে আসুক। এটি আর এক মুহুর্তও যেনো দেরি না হয়। ঢাকা চায় দুনিয়াবাসী ওই পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করুক। তারা মিয়ানমারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে পারে। চাপ দিতে পারে। দ্বিতীয়ত: মানবিক সহায়তা। সব রোহিঙ্গার ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত বিশ্বের ওই মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। এবার গত বছরের তুলনায় কম সহায়তা এসেছে। টার্গেটের মাত্র ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে অমেরিকান সহায়তা সবচেয়ে বেশি। ঢাকা চায় মানবিক ওই কাজে সারা দুনিয়া বরাবরের মত পাশে থাকুক। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় দেশগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে হস্ত প্রসারিত করুক। সেই আবেদনই জানানো হয়েছে। তৃতীয় এবং শেষ যে বিষয়টি তা হলো রাখাইনে যে পরিস্থিতি রোহিঙ্গারা মোকাবিলা করেছে সেটির পূনরাবৃত্তি রোধে মিয়ানমারকে নিশ্চয়তা প্রদান। তা না হলে প্রত্যাবাসন হলেও সেটি টেকসই হবে না। বিশ্বকে মিয়ানমারের কাছ থেকে সেই অঙ্গীকার আদায় করতে হবে। রাখাইনের বর্বরতায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের অ্যাকাউন্টিবিলিটি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য যেখানে সূযোগ রয়েছে সেখানেই এ নিয়ে কথা বলতে হবে। এ ইস্যুতে বিশ্বকে এক হতে হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বন্ধু রাষ্ট্র মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন অবস্থান নয়। চিঠিটি একান্তই রোহিঙ্গা ইস্যুটাকে স্যানসেটাইজ বা স্মরণে রাখার জন্য। বাংলাদেশের অন্য বন্ধু, উন্নয়ন সহযোগীদের রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে আপডেট রাখতেই চিঠি দিচ্ছেন মন্ত্রী। এটি নিছক একটি নির্মোহ উদ্যোগ।