তাদের দেয়া তথ্যমতে নিউ মার্কেটের অদূরে রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ৩-৪ জন করে তিনটি পথশিশুর দল এসব টানছে। আর মাথায় হাত দিয়ে ঝিম ধরে বসে আছে। ছবি তুলতে চাইলেই সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে তারা।
পথশিশুরা জানায়, ড্যান্ডি একধরণের নেশা। মাত্র ২০-৩০ টাকায় কেনা যায়। সারাদিন প্লাস্টিক বা লোহা জাতীয় পূরণো জিনিস কুড়িয়ে আগে খাবার কিনে খেতাম। এখন অনেক সময় খাবার না খেয়ে ড্যান্ডি কিনে খাই। এটি খাইলে ক্ষুধার কথাও মনে থাকে না।
জানা গেছে, নেশার এই উপকরণটি হচ্ছে ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যান্ড্রাইট আঠা। নেশাগ্রস্ত পথশিশুদের কাছে এটি ড্যান্ডি নামেই পরিচিত। ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ নামক আঠালো বস্তুটি (গাম) দিয়ে এই মাদক তৈরি করে মাদক ব্যবসায়ীরা।
ড্যান্ড্রাইট অ্যাডহেসিভ টিউবে বা কৌটায় দুভাবে পাওয়া যায়। প্রতিটি টিউবের দাম ১৫০-২০০ টাকা, কৌটার দাম ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। এগুলো সাধারণত হার্ডওয়ারের দোকানে বিক্রি হয়। দাম বেশি হওয়ায় আসক্ত শিশুরা কৌটা কিংবা টিউব কিনতে পারে না। ফলে, একশ্রেণির মাদক বিক্রেতা ২০-৩০ টাকার বিনিময়ে অল্প বিক্রি করে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. একরামুল হক বলেন, নাকে-মুখে ঘনঘন এটির শ্বাস নিলে মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। পাশাপাশি আসক্তি তৈরি হয়। তবে আঠার গ্যাস ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। নাকের ভেতরে ঘা হয়ে যায়। এতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ মাদকে মানসিক এবং শারীরিক উভয় ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যেহেতু শিশুরা এটা গ্রহণ করে, ফলে এর প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হবে।
ছন্নছড়া পথশিশুদের কাছে এটি যখন নেশা এবং চিকিৎসকের মতে এটির প্রতিক্রিয়া যখন ভয়াবহ তখনো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে এটি মাদক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, এটি প্রচলিত কোনো মাদক নয়। ড্যান্ডি বা আঠা জাতীয় দ্রব্যগুলো নিষিদ্ধ ও মাদক আইনে না পরায় এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে এটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মত পোষণ করেন তিনি।
পথশিশুদের ড্যান্ডিতে আসক্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম মহানগর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, বিভিন্নভাবে ড্যান্ডি নেশার খবর আমরা পেয়েছি। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবুও এমন ঘটনায় পুলিশ বসে নেই, এদের দেখলেই শিশুদের উদ্ধার করে তাদের মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিশুদের পিতা-মাতাদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং একইসাথে গাম বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সচেতন গড়ে তোলা প্রয়োজন। নেশায় আসক্ত এসব শিশুদের সংশোধনের জন্যে প্রত্যেকটি শহরে সংশোধনাগার নির্মাণের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় অবিস্থত মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক আফসারুল ইসলাম বলেন, ছোট বাচ্চারা যদি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তাহলে আমাদের সমাজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। সামাজিক এ অধঃপতন ঠেকাতে সামাজিক প্রতিরোধ জরুরী।
তিনি বলেন, নেশা থেকে অনেক অপরাধের জন্ম হয়। নেশার টাকা জোগাড় করতে প্রথমে চুরি এবং পরে বড় ধরনের অপরাধের দিকে এগিয়ে যাবে এই শিশুরা। তাই সকলে মিলেই এদের বোঝানোর পাশাপাশি প্রতিরোধ করতে হবে।