সৌদিআরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠানো হবিগঞ্জের সেই হোসনা আক্তার অবশেষে পরিবারের কাছে ফিরেছেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাত ১১টা ২০ মিনিটে হোসনাকে বহনকারী সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৪ ফ্লাইট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হোসনাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। রাত ৩টায় নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে মন্ত্রণালয়ের লোকজন হোসনাকে হবিগঞ্জ পৌঁছে দেয়।
রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় নিজ বাড়িতে না গিয়ে হবিগঞ্জ পৌর এলাকার উমেদনগরে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকেন হোসনা ও তার স্বামী। পরে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে হোসনা ও তার স্বামী নিজ বাড়ি আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আনন্দপুর গ্রামে যান। তবে হোসনা কিছুটা অসুস্থ বলে জানান তার স্বামী।
এদিকে, সৌদিআরবে ভয়াবহতার কথা জানাতে গিয়ে আতকে উঠেন হোসনা। সেই দিনগুলোর কথা তিনি দ্রুত ভুলে যেতে চান।
হোসনা বলেন, সৌদিআরব যাওয়ার পর তাকে জেদ্দা থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ঠিকভাবে খেতে দেয়া হয়নি একটি ঘরে বন্ধি করে রাখে। অমানসিক নির্যাতন করা হয় তাকে। দেশে আসতে চাইলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, আমি দেশে আসার কথা বললে মালিক আমাকে বলে ‘তোকে দুই বছরের জন্য কিনে এনেছি। সুতরাং তোকে আমরা বাংলাদেশে পাঠাব না।’ এরপরও আমি আসতে কান্নাকাটি করলে তারা আমাকে মারপিট করে। পরে একদিন লুকিয়ে আমি বাসার ছাদে দিয়ে ভিডিও করে আমার স্বামীর কাছে পাঠাই।’
হোসনা বলেন, সেখানে শুধু আমি না, আমার মতো আরও অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। খোজ খবর নিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করা উচিত।
হোসনার স্বামী শফিউল্লাহ বলেন, আমি গরিব হওয়ার কারণে দালাল সাহিনের প্রলোভনে পরে আমার স্ত্রীকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। আর যেন কোনো নারী বিদেশ না যায়।
তিনি বলেন, আমি দালাল সাহিনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। সেই সঙ্গে আমি আমার ক্ষতিপূরণ চাই।
এর আগে, ভাগ্য বদলের আশায় মাত্র ২৫ দিন আগে সৌদিআরব গিয়েছিলেন হোসনা আক্তার। কিন্তু সেখানে যাওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এক পর্যায়ে নির্যাতন সইতে না ফেরে বাঁচার আকুতি জানিয়ে স্বামীর কাছে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান হোসনা। অবশেষে ব্রাক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় বুধবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৪ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন তিনি। পরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।