কানে অতিক্ষুদ্র ইয়ারপিস, শরীরে রাবার দিয়ে আটকানো ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস, চলছে পরীক্ষা। হলের বাইরে থেকে ডিভাইসে আসছে প্রশ্নের উত্তর। পরীক্ষার্থী কানে লাগানো ইয়ারপিসে উত্তর শুনে তা হুবহু লিখে যাচ্ছেন উত্তরপত্রে।
এমনই এক চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বিসিএস ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় এমন অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতি করে আসছিল এই চক্রটি।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. মাহমুদুল হাসান আজাদ (৩৬), মো. নাহিদ(২৫), মো. রাসেল আলী (২৯), মো. রুহুল আমীন (২৫), মো. খালেকুর রহমান টিটু (২৯), মো. আহমেদ জুবায়ের সাইমন (২৬) ও মো. ইব্রাহিম (২৪)।
শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর কাফরুল ও লালবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান এসব তথ্য জানান।
ডিসি মিডিয়া বলেন, রাজধানীর লালবাগ ও কাফরুল থানা এলাকায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। এ সময়
বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে ফাঁস করা চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে ১২টি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস, ১৬টি মাইক্রো হেডফোন, ১৫টি মোবাইল ফোন, ২৫টি সিম কার্ড, রাবারের আর্ম ব্যান্ড ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামধানের জন্য ব্যবহৃত ৪ টি বই উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাসুদুর রহমান বলেন, গ্রেফতাররা পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন হলের বাইরে নিয়ে আসে। সেই প্রশ্ন এক্সপার্ট গ্রুপ দিয়ে সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া জনতা ব্যাংকের এ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার (এইও) পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হল থেকে সংগ্রহ করে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করে চক্রটি।
এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষাসহ স্কুল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নের উত্তর সরবররাহ করতো তারা। চাকরির ধরণ বুঝে টাকার পরিমাণ দাঁড়াতো ৫ থেকে ১৫ লাখে।
ডিসি মিডিয়া আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এই চক্র পরীক্ষার প্রার্থী নির্বাচন, ডিভাইস সরবরাহের প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং সমাধানের প্রক্রিয়া ইত্যাদি আলোচনা করে। ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসগুলো বিশেষ রাবারের ব্যান্ড দিয়ে শরীরে আটকে রাখতো পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে নির্ধারিত প্রার্থীর উত্তর ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরবরাহ করে তারা। জামানত হিসেবে পরীক্ষার্থীর মূল সার্টিফিকেট জমা রাখতো প্রতারক চক্রটি।
ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ জানায়, গ্রেফতারদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ ৩৬ তম বিসিএসের মাধ্যমে অডিটে (নন-ক্যাডার) চাকরি পায়। এই সাতজনের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। রোববার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।