কক্সবাজার শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কেজি (কিন্ডারগার্ডেন) স্কুল অথবা কেজি সিলেবাস নিয়ে পাঠদান করে এমন স্কুলের সংখ্যা প্রায় ২ শ’। এসব কেজি মানের স্কুলে প্রায় ৫৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রাথমিক পর্যায়ে লেখা পড়া করছে। এই অর্ধ্ব লক্ষাধিক কোমলমতি ছাত্র ছাত্রী কক্সবাজার শহরের ২ টি লাইব্রেরির কাছে সম্পূর্ণ জিম্মি হয়ে পড়েছে। লাইব্রেরি ২টির একটি হলো-শহরের প্রধান সড়কের ফজল মার্কেটের সামনে অবস্থিত মোহাম্মদী লাইব্রেরি, অপরটি হলো-শহরের রক্ষিত মার্কেটে অবস্থিত রহমানিয়া লাইব্রেরি।
দেশের ন্যাশনাল কারিকুলাম বর্হিভুত কোন বই কেজি স্কুলে পড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) থেকে অনুমতি নিয়েই পড়াতে হবে, সরকারের এরকম কঠোর বিধান রয়েছে। কিন্তু কক্সবাজার জেলা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় ২শ’ কেজি স্কুলের মধ্যে ২ টি কেজি স্কুল ছাড়া এ বিধান কেউ মানছেনা। কেজি স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেরা প্রাক প্রাইমারির আগে আরো ২ টি ক্লাস সৃষ্টি করেছে। প্রাক প্রাথমিক সহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তাদের মোট ক্লাসের সংখ্যা মোট ৮ টি। এই ৮ টি শ্রেণিতে কেজি স্কুল গুলো প্রতিটি শ্রেণীতে ৯ থেকে ১৩ টি পর্যন্ত ন্যাশনাল কারিকুলাম বর্হিভুত বিভিন্ন কোম্পানির বই আবশ্যিকভাবে ক্রয় করার জন্য ছাত্র ছাত্রীদেরকে বাধ্য করছে। আবার এসব ন্যাশনাল কারিকুলাম বর্হিভুত বিভিন্ন কোম্পানির বই উল্লেখিত মোহাম্মদী লাইব্রেরি ও রহমানিয়া লাইব্রেরির যেকোনো একটি থেকে অবশ্যই কিনতে হবে। ক্রয়কৃত বইয়ে সেই লাইব্রেরির অবশ্যই সীল মোহর থাকতে হবে। না হয়, সংশ্লিষ্ট কেজি স্কুল সে বই পড়াবে না, স্কুলের ভিতরে ঢুকাতেও দেবেনা। কেজি স্কুলের নির্ধারণ করে দেওয়া নিদিষ্ট লাইব্রেরি ছাড়া অন্য কোন লাইব্রেরি থেকে বই ক্রয় করলে অভিবাবকদের সে বই আবার ফেরত দিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্ধারিত লাইব্রেরি থেকে অবশ্যই কেজি স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধ্য করে বই কিনিয়ে নিচ্ছে। আবার সে বই গুলো বাজার মূল্যের চেয়ে কমপক্ষে ৩/৪ গুন দামে নির্ধারিত লাইব্রেরি থেকে কিনতে হয়। কোন কমিশন কিংবা অন্য কোন ছাড় ক্রেতা অভিবাবকদের বই দেওয়া হয়না। আর ন্যাশনাল কারিকুলাম বর্হিভুত বিভিন্ন কোম্পানির এই বইগুলোর কোন পাঠ ও শিক্ষা ভ্যালু নেই। কোন কোন কেজি স্কুলে ন্যাশনাল কারিকুলাম বর্হিভুত বিভিন্ন কোম্পানির এই বইগুলো একেবারেই পড়ানো হয়না। অধিকাংশ কেজি স্কুলে পড়ানোর শিক্ষকও নেই। আবার নির্ধারিত লাইব্রেরি থেকে এই বই গুলোর ক্লাস অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কেজি স্কুলের দেওয়া তালিকার পুরো সেট কিনতে হবে। লাইব্রেরি মালিকেরা বই এর ক্লাস ভিত্তিক পূর্ণ সেট ছাড়া অভিবাবকদের বই বিক্রি করবেনা। লাইব্রেরি গুলো যোগসাজস করে এক কেজি স্কুলের বই নির্ধারিত লাইব্রেরি ছাড়া অন্য লাইব্রেরিতে রাখবেনা। রাখলেও সেটা সহজে বিক্রি করবেনা।
এভাবে কক্সবাজার শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অর্ধ্ব লক্ষাধিক ছাত্র ছাত্রীকে জিম্মি করে দেড় হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার পর্যন্ত ন্যাশনাল কারিকুলাম বর্হিভুত বিভিন্ন কোম্পানির বই ক্রয় করতে বাধ্য করাচ্ছে কেজি স্কুল গুলো। ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কেজি স্কুল গুলোর এ ধরনের নৈরাজ্য ও ছড়া ব্যবসার বিষয়ে অভিবাবকেরা অনেকটা অসহায় হয়ে এ বিষয়ে মুখ খুলতে পারছেননা। কারণ অভিবাবকদের কলিজার টুকরা সন্তানেরা সেখানে পড়ছে। তাই ন্যাশনাল কারিকুলাম বর্হিভুত বিভিন্ন কোম্পানির অতিরিক্ত বই কেনার বিষয়ে মুখ খুললে কেজি স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের সন্তানদের বারটা বাজাবে।