ঢাকার নবাবগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত জনপদ কান্তারটেক গ্রামে বিদেশফেরত দরিদ্র পরিবারের এক যুবতীর ইজ্জতের মূল্য ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন স্থানীয় সমাজপতিরা। এ ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি পুলিশ ও মিডিয়াকর্মীদের না জানাতে একটি মহল ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাত ৮টার সময় স্থানীয় বালেঙ্গা গ্রামের মাদকসেবী জামাই সুমন ও রাজাপুর এলাকার হায়াত আলী ওই মেয়েকে তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পাশের সরিষা ক্ষেতে। এরপর তাকে ধর্ষণ করে ওই দুই বখাটে। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে ধর্ষক সুমন ও হায়াত পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় মেয়েটির বাবা ও মা বাড়িতে ছিলেন না। তারা তাদের পীরের বাড়ি ধলসুরা গ্রামে একটি মাহফিলে গিয়েছিলেন।
প্রতিবেশী এক গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘আমি ও আমার ছেলে ঘরে বসে কথা বলছিলাম। এ সময় মেয়েটির চিৎকার শুনে আমরা টর্চলাইট নিয়ে বের হই। তখন ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।’
বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় সমাজপতি ওহাব মাতবরের সভাপতিত্বে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে এক সালিস বৈঠক বসে। দোহার নয়াবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ, স্থানীয় টুটুল, জয়কৃষ্ণপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব, সমাজপতি সিদ্দিকসহ ১০-১৫ জন মাতবর সালিসে উপস্থিত ছিলেন। তারা দুই ধর্ষককে মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে বিচার সমাপ্ত করে। এ সময় এলাকার প্রায় কয়েক শ লোক উপস্থিত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
রোববার বিকালে নবাবগঞ্জ থানার পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে ধর্ষিতা ও তার মাকে থানায় নিয়ে আসে। তবে নবাবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোজ্জাম্মেল হোসেন বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
সালিসে উপস্থিত মো. শহীদ জানান, স্থানীয় মুরব্বি ওহাবের সভাপতিত্বে হওয়া সালিসে মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা অস্বীকার করে। এ সময় তাকে হেনস্থা করার অপরাধে সুমন ও হায়াত আলীকে ১০টি করে জুতাপেটা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক পুলিশকে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।