সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অন্যতম দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ এখন দৃশ্যমান। প্রকল্পের শ্রমিকরা সকাল-সন্ধ্যা দ্রুত কাজ করছেন। রেলপথ বসানোর জন্য মাটির রাস্তা থেকে শুরু করে ব্রিজ, কালভার্ট তৈরির কাজও দিন-রাত চলছে। নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে কক্সবাজার রেলস্টেশনেরও।
নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অবশ্য কিছু ঝামেলা রয়ে গেছে। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, যে গতিতে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে।
তবে প্রথম দফায় এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত। রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ আপাতত হবে না। এটা হবে দ্বিতীয় ধাপে। সরকারের নিজস্ব এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবির ১৫০ কোটি ডলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার চৌধুরীপাড়ায় দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু তহবিলের সংস্থান না হওয়ায় প্রায় ৭ বছরেও সরকার জমি অধিগ্রহণ ছাড়া তেমন কোনো কাজ করতে পারেনি। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ দোদুল্য হয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত সহযোগিতায় এগিয়ে এলো এডিবি। তাদের সঙ্গে সরকারের প্রথম দফা ঋণচুক্তি হয় ২০১৭ সালের ২১ জুন। আর দ্বিতীয় দফায় আরেকটি চুক্তি হয় ২০১৯ সালের ২৩ মে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণ শেষ হওয়ার পরই আটঘাট বেঁধে নির্মাণকাজে নেমেছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে। দুই লটে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ২০১৮ সালের মার্চ ও ১ জুলাই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করে। এই রেলপথ যাবে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ওপর দিয়ে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার মূল রেললাইন এবং ৩৯ দশমিক ২ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ ১৪০ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এই পথে থাকবে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ১৪৫টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট। বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। হাতি চলাচলের যেসব পথ রয়েছে সেগুলোর জন্য নির্মাণ করা হবে আন্ডারপাস ও ওভারপাস। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত থাকবে নতুন স্টেশন দোহাজারী, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজারে। রামুতে হবে জংশন। আর কক্সবাজারের রেলস্টেশনে নির্মাণ করা হবে আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিং। স্টেশনটি হবে ঝিনুক আকৃতির। প্রকল্প সূত্র জানায়, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথটি নির্মাণ হবে দুটি লটে। প্রথম লটে নির্মাণ করা হবে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক। একই সঙ্গে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন কাজ সম্পন্ন করা হবে। আর দ্বিতীয় লটে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক এবং কক্সবাজার আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ করা হবে। এ ধাপের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। অগ্রগতি : সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত (২২ জানুয়ারি) এই প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ। মেজর ৩৯টি ব্রিজের মধ্যে সাতটি ব্রিজের পিলার নির্মাণ শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন শুধু উপরের অংশ বসানোর বাকি। একইভাবে আরও আটটি ব্রিজের পিলারের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১৪৫টি মাইনর ব্রিজ-কালভার্টের মধ্যে ২৫টির নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। কক্সবাজার রেলস্টেশনের পাইলিং শুরু হয়েছে। এই রেলপথ নির্মাণে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে মাটির সড়ক বা এমব্যাঙ্কমেন্ট নির্মাণ। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে এই কাজেও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। এখন রেলপথের ৩৩ ও ৮২ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে মাটির কাজ চলছে। আরও অনেক স্থানে মাটির কাজ চলমান। রেলপথটির উচ্চতা হবে স্থানভেদে বিভিন্ন লেয়ারে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত।