শিক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত গাইড অথবা সহায়ক বই বিক্রি করা নিষিদ্ধ থাকলেও সেই আদেশ মানছে না চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষার্থীদের মাঝে সরকারের দেয়া বই বিতরণের পরও অতিরিক্ত সহায়ক বই বিক্রি করছেন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ। অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা সন্তানদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছে, স্কুলের দেয়া অতিরিক্ত বই না নিলে পরীক্ষায় শিক্ষকরা নাম্বার দেবেন না। তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত দামে সরকারের নিষিদ্ধ করা এসব গাইড ও সহায়ক বই স্কুল থেকে কিনতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা শহরে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ। নার্সারি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে এখানে। ২০ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করে থাকেন স্কুলটিতে। জেলা প্রশাসক সভাপতি হওয়ায় স্কুলটির পাঠদানের প্রতি আস্থা বাড়তে থাকে অভিভাবক মহলে। ফলে অল্প দিনেই কলেকক্টর স্কুল এন্ড কলেজটি সবার মাঝে পরিচিতি লাভ করে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি হঠাৎ করেই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদুজ্জামান প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি নোটিশ জারি করেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, সকল শিক্ষার্থীকে স্কুলের অফিসকক্ষ থেকে নিজ নিজ শ্রেণি অনুযায়ী অতিরিক্ত সহায়ক বই নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বইভিত্তিক দামও নির্ধারণ করে দেন স্কুলের অধ্যক্ষ মাসুদুজ্জামান। সহায়ক বইয়ের মধ্যে রয়েছে নার্সারি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন গাইড বই, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণসহ নানা ধরনের অতিরিক্ত বই। এসব বই স্থানীয় একটি লাইব্রেরি থেকে ২০ শতাংশ কমিশনে অধ্যক্ষ নিজেই কিনে শিক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন।
অভিভাবকেরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার শিশুদের জন্য যে বই দিয়েছে তা যথেষ্ট পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা জন্য। তার পরও স্কুল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বই চাপিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। একদিকে যেমন অতিরিক্ত বই দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে লাইব্রেরি থেকেও বেশি দামে বই বিক্রি করছেন শিক্ষকরা। অতিরিক্ত বই স্কুল থেকে না নিলে সন্তানকে অন্য স্কুলে ভর্তি করার পরামর্শও দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সুতরাং কষ্ট হলেও চড়া দামে বই সন্তানের জন্য কিনতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
এ বিষয়ে কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদুজ্জামান জানান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভালো রেজাল্ট করার জন্য স্কুল থেকে সহায়ক বই বিক্রি করা হচ্ছে। অতিরিক্ত বই সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ হলেও এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সম্মতিক্রমে শিক্ষার্থীদের বাড়তি বই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, নার্সারি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণসহ বিভিন্ন বই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্কুলের অফিসকক্ষ থেকে তাদের নির্ধারিত মূল্য দিয়ে নিতে বলেছেন স্কুলের অধ্যক্ষ। এই বই না নিলে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষকরা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার নিখিল চক্রবর্ত্তী জানান, কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি জেলা প্রশাসক। সরকারি নীতিমালা অমান্য করে অতিরিক্ত বই কোনোভাবেই স্কুল কর্তৃপক্ষ বিক্রি করতে পারে না। অভিযোগ সত্য হলে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে স্কুলটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।